বেনাপোল (যশোর) সংবাদদাতা: রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতা ও পেনশনের দাবিতে টানা তৃতীয় দিনের কর্মবিরতি পালন করেছেন যশোর জেলার ৮টি পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
রবিবার সকাল থেকে বেনাপোল, যশোর, নওয়াপাড়া, কেশবপুর, মনিরামপুর, বাঘারপাড়া, চৌগাছা ও ঝিকরগাছা পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারিরা স্ব-স্ব পৌর কার্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করে মঙ্গলবার দিনব্যাপী বেনাপোল পৌর চত্বরে কর্মবিরতি পালন করেন।
দীর্ঘ ৬মাস যাবত পৌরসভা থেকে বেতন ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপনের মাধ্যমে তারা এ আন্দোলনের মাধ্যমে স্থানীয় সরকারের আশু হস্তক্ষেপসহ প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন। তারা বলেছেন, জাতীর জনকের স্বপ্ন ছিল এদেশের মানুষ কেউ না খেয়ে মারা যাবে না। তাইতো তিনি স্বাধীনতার ডাক দিয়ে এদেশকে পাকিস্তানিদের হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন। এনে দিয়েছেন লাল সবুজের পতাকাসহ আমাদের স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার অধিকার। তারই ধারাবাহিকতায় সম্মানের সহিত পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকার তাগিদে শিখেছি লেখাপড়া। নাগরিক সেবা দিচ্ছি দেশের বিভিন্ন পৌরসভায়। সেখানে ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভা একই মন্ত্রণালয় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে পরিচালিত হলেও ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকতা –কর্মচারিরা বেতন ভাতা ও পেনশন পাচ্ছেন সরকারি কোষাগার থেকে আর পৌরসভার কর্মকর্তা কর্মচারিরা চেয়ে আছেন কখন বেতন পাবেন পৌর মেয়রদের কাছ থেকে। মাসের পর মাস চলে যাই, তবু দেখা মেলে না নিয়মিত বেতন ভাতার। সে সাথে নেই পেনশনের ব্যবস্থা। যার কারণে কর্মজীবন শেষে এসকল কর্মকর্তা কর্মচারিদের থালা হাতে ঘুরতে হয় মানুষের দ্বারে দ্বারে।
তাই, এক দেশে দুই নীতি না করে দেশের ৩২৭ টি পৌরসভার ১৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারিদের আত্ম মর্যাদার কথা ভেবে রাস্ট্রীয় কোষাগার থেকে বেতন ভাতা ও পেনশনের দাবি করেন। তারা মানবেতর জীবন যাপন করা পৌর কর্মকর্তা কর্মচারিরা।
এ বিষয়ে বেনাপোল পৌরসভার কর্মকর্তা ও যশোর জেলা পৌরসভা সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ আব্দুল্লাহ আল মাসুম রনি বলেন, বেনাপোল পৌরসভার কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা ১৫০ জন। এর মধ্যে নিয়মিত কাজ করেন ৪২ জন। যার অধিকাংশ কর্মকর্তা কর্মচারী দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে এখানে চাকুরি করছে। যে কারণে প্রায় সবাইকে বেনাপোলে বাসা বাড়ি ভাড়া করে পরিবার পরিজন নিয়ে থাকতে হয়। সেখানে দীর্ঘ ৬ মাস যাবত পৌরসভা থেকে কোন বেতন ভাতা না পেয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
একদিকে বাসাবাড়ির মহাজনরা ভাড়ার তাগিদ দিচ্ছেন আর অন্যদিকে সংসার চালাতে বিভিন্ন দোকানদারদের দ্বারস্থ্য হয়েও মাস শেষে দেনা পরিশোধ করতে না পারায় অপমানের শিকার হতে হচ্ছে পদে পদে। যে কারণে উক্ত তিন দিনে বেনাপোল পৌর এলাকার রাস্তাঘাট পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা, বর্জ্রপদার্থ পয়ঃনিস্কাশন, এলাকার বিজলী বাতিসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়। কেবলমাত্র পৌর এলাকায় পানির লাইন ঠিক রাখা হয়। যদি, দাবি মানা না হয় তাহলে পানির ব্যবস্থাও বন্ধ করে দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস এ্যাসোসিয়েশন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও এই কর্মবিরতি সমাবেশের প্রধাণ বক্তা শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা পৌর এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা, সুপেয় পানি সরবরাহ, রাস্তা আলোকিতকরন, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ উন্নয়ন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণ, চিত্ত বিনোদন, খেলাধুলা, জনশৃংখলা রক্ষা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পরিসেবাগুলো জনগনের চাহিদা অনুযায়ী নিরবিচ্ছিন্ন সেবা প্রদান করে যাচ্ছি। অথচ: বেনাপোলসহ সারাদেশের ৩২৭ টি পৌরসভার ১৫ হাজার কর্মকর্তা কর্মচারিরা ২ থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত বেতন ভাতা না পেয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছি। আমরা সরকারের কাছে দাবি রাখছি অনতি বিলম্বে আমাদের সরকারি কোষাগার থেকে বেতন ভাতা ও পেনশন দিয়ে সুস্থ ভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেওয়া হোক।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের বেনাপোল পৌর শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারন সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাসুম, যশোর পৌর শাখার সভাপতি আফজাল হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, নওয়াপাড়া পৌর শাখার সভাপতি শাহজামাল, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল আজিজ, কেশবপুর পৌর শাখার সভাপতি পলাশ সিংহ, মনিরামপুর পৌর শাখার সভাপতি শাহিনুল হাসান, সাধারণ সম্পাদক এম এম আব্দুর রশিদ, বাঘারপাড়া পৌর শাখার সভাপতি আফজাল হোসেন, চৌগাছা পৌর শাখার সভাপতি কলিমুল্লাহ সিদ্দিক, সাধারণ সম্পাদক মুকুরুল ইসলাম মিন্টু, ঝিকরগাছা পৌর শাখার সভাপতি শাহ আলম মিন্টু, সাধারণ সম্পাদক কামরুল জামান টিটোসহ এসকল পৌরসভার সকল কর্মকর্তা কর্মচারী।
এদিন বেনাপোল পৌরসভার মূল কার্যালয়ে তালাসহ সকল কার্যক্রম বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
সংবাদটি ভাল লাগলে Share বাটনে ক্লিক করুন
Like this:
Like Loading...
Related